দেশব্যাপী ভ্যাকসিন কার্যক্রম উদ্বোধন, স্বাস্থ্যমন্ত্রীর টিকা গ্রহন
নিজস্ব প্রতিবেদক : দেশব্যাপী করোনার টিকাদান কার্যক্রমের উদ্বোধন করেছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। সকাল ১০টায় মহাখালীতে স্বাস্থ্য ভবনে ভার্চুয়ালি টিকা কার্যক্রম উদ্বোধন করেন তিনি। টিকাদান কর্মসূচি উদ্বোধন করার পর স্বাস্থ্যমন্ত্রী টিকা গ্রহণ করেন।
এ সময় স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানান, এ পর্যন্ত যারা করোনার টিকা নিয়েছেন সবাই সুস্থ আছেন, পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই বললেই চলে।
রোববার সকালে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অনুষ্ঠানে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হয়ে জাহিদ মালেক ভ্যাকসিন কর্মসূচি উদ্বোধন করেন। এরপর তিনি রাজধানীর শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার হাসপাতালে করোনার টিকা নেন।
এরপর থেকেই দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভ্যাকসিন কর্মসূচি শুরু হয়েছে। এরই একটি রাজধানীর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল। সেখানে সেনাবাহিনী সদস্যদের মাঝে কোভিড ১৯ ভ্যাকসিন প্রদান কর্মসূচির উদ্বোধন হয়েছে। এ কার্যক্রম উদ্বোধন করেন ভারপ্রাপ্ত সেনাপ্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ।
তিনি বলেন: বর্তমান সরকারের বিনামূল্যে টিকা প্রদান কর্মসূটি অনন্য মাইলফলক হয়ে থাকবে। আর দুঃসময়ে যেভাবে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সকল কাজে পারদর্শীতা দেখিয়েছে তা ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে।
রোববার উদ্বোধনের দিন প্রায় ২০০ জন সেনা সদস্য সিএমএইচে ভ্যাকসিন নেবেন বলেও জানিয়েছেন এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ।
সেনাবাহিনীর চিফ অব জেনারেল স্টাফ (সিজিএস) লে. জেনারেল আতাউল হাকিম বলেছেন: টিকা নিয়ে অন্য সব দেশে হিমশিম খেলেও আমরা সেদিক থেকে স্বস্তিতে আছি। এখানে আমি প্রথম টিকা নিলাম।
উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, আমরা আজকে একটি মহৎ কাজ করতে যাচ্ছি।বাংলাদেশে প্রথম কোভিড-১৯ দেখা দেয় ৮ মার্চ। তখন আমরা রোগী শনাক্ত করতে সক্ষম হই এবং ১৮ মার্চ প্রথম করোনায় মৃত্যু হয়। তখন থেকেই আমরা প্রস্তুতি গ্রহণ শুরু করি।সব কিছু মিলিয়ে আমরা সুফল পাই।প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় আমরা এগোতে থাকি।অনেক সমালোচনা হয়েছে, সমস্ত সমালোচনার উর্ধ্বে উঠে আমরা কাজ করতে থাকি।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের অবস্থান অন্যন্য দেশের থেকে তুলণামূলক অনেক ভালো। আমরা জুন মাস থেকে ভ্যাকসিন আনার কাজ শুরু করি। আজকে আমরা সারাদেশব্যাপী ভ্যাকসিন কার্যক্রম উদ্ধোধন করতে যাচ্ছি। দেশের সকল জেলার সাথে আমরা যুক্ত হয়েছি।
মন্ত্রী বলেন, আজকে আমরা দেশের সকল সম্মানিত ব্যক্তিদের সাথে একসাথে ভ্যাকসিন গ্রহণ করব। এই ভ্যকসিন নিয়ে যাতে কোন ভুয়া তথ্য না ছড়ায় এই আশা করছি। এই ভ্যাকসিন সব চেয়ে বেশি নিরাপদ। যতগুলো ভ্যাকসিন আছে তারমধ্যে অ্যাষ্ট্রোজেনেকার ভ্যাকসিন বেশি নিরাপদ। এর পার্শপ্রতিক্রিয়া নেই বললেই চলে। যতগুলো মানুষকে আমরা ভ্যাকসিন দিয়ে তারা সবাই ভালো আছে সুস্থ আছে।
মন্ত্রী আরো বলেন, ভ্যাকসিন অ্যাপসের মাধ্যমে নিবন্ধিত হচ্ছে। যদি অ্যাপসের মাধ্যমে কেউ নিবন্ধন না করতে পারেন তাহলে আমাদের আরো নির্দেশনা আছে তারা ইউনিয়ন বা উপজেলায় গিয়ে তথ্য সেন্টারের মাধ্যমে নিবন্ধন করতে পারবেন এবং ভ্যাকসিন নিতে পারবেন। এটাও যদি না পারে তাহলে তারা আসলেই ভ্যাকসিন নিতে পারবে। ফর্ম ফিলাপ করলেই তারা ভ্যাকসিন পাবে। ভ্যাকসিন না নিয়ে কেউই যাবে না। আমাদেরই এটিই লক্ষ্য। আমাদের কাছে ৭০ লাখ ভ্যাকসিন আছে। যেটা ৩৫ লাখ লোককে আমরা দুই ডোজ করে দিতে পারব।
তিনি আরো বলেন, সারা বছরব্যাপী আমাদের এই করোনা ভাইরাসের টিকা কর্মসূচী চলবে। এটা একদিনের বিষয় নয়, এক মাসের বিষয় নয়। সারা বছর ধরে এই ভ্যাকসিন কার্যক্রম চলমান থাকবে। আমাদের ভ্যাকসিন আসতে ছয় মাস লাগবে। তারপর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে কোভ্যাক্স ভ্যাকসিন আসবে। তারপর থেকে থেকে আমরা সেই ভ্যাকসিন দিতে থাকব।
জানা গেছে, রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে প্রধান বিচারপতি, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব ও মন্ত্রিপরিষদ সচিব টিকা নেবেন।
এর আগে গত ২৭ জানুয়ারি দেশে প্রথম করোনা টিকার প্রথম পরীক্ষামূলক কর্মসূচি শুরু হয়। এদিন প্রথম টিকা নেন রাজধানীর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স রুনু ভেরোনিকা কস্তা। প্রথম দফায় কয়েকজন ফ্রন্টলাইনারকে পরীক্ষামূলক টিকা দেওয়া হয়।
ঢাকার বাইরে সারাদেশের বিভিন্ন হাসপাতাল, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স মিলিয়ে ৯৫৯টি স্থান নির্ধারণ করা হয়েছে। এসব জায়গায় ২ হাজার ১৯৬টি দল টিকাদান কার্যক্রম পরিচালনা করবে। দুজন স্বাস্থ্যকর্মী এবং দুজন স্বেচ্ছাসেবক মিলিয়ে প্রতিটি দলে চারজন সদস্য থাকবেন। দেশের বিভিন্ন স্থানে মোট ১ হাজার ১৫টি হাসপাতালে টিকা বা ভ্যাকসিন দেওয়া হবে। টিকাদানে নিয়োজিত থাকবে স্বাস্থ্যকর্মীদের ২ হাজার ৪০২টি দল।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) টিকাদান কেন্দ্রগুলো হলো-
সংসদ সচিবালয় ক্লিনিক, মহাখালীতে সংক্রামক রোগ হাসপাতাল, উত্তরার কুয়েত-বাংলাদেশ মৈত্রী হাসপাতাল, মিরপুরের ঢাকা ডেন্টাল কলেজ, শ্যামলীতে ঢাকা শিশু হাসপাতাল, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল, মিরপুরের লালকুঠি হাসপাতাল, মোহাম্মদপুর ফার্টিলিটি সার্ভিসেস অ্যান্ড ট্রেনিং সেন্টার, জাতীয় বাতজ্বরজনিত হৃদরোগ প্রতিরোধ কেন্দ্র, জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠান (পঙ্গু হাসপাতাল), শেখ রাসেল জাতীয় গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, জাতীয় বক্ষব্যাধি ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, জাতীয় নাক কান ও গলা ইনস্টিটিউট, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব কিডনি ডিজিজেস অ্যান্ড ইউরোলজি, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস ও হাসপাতাল, শ্যামলীর ২৫০ শয্যার টিবি হাসপাতাল।
এ ছাড়া ডিএনসিসির মগবাজারের নয়াটোলা মাতৃসদন কেন্দ্র, মোহাম্মদপুরের বাঁশবাড়ি মাতৃসদন কেন্দ্র, মিরপুর মাজার রোডের নেকি বাড়ির টেক মাতৃসদন কেন্দ্র, মিরপুরের বর্ধিত পল্লবী এলাকা মাতৃসদন কেন্দ্র ও উত্তরা ৬ নম্বর সেক্টরের মাতৃসদনে করোনার টিকা বা ভ্যাকসিন দেওয়া হবে।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) টিকাদান কেন্দ্রগুলো হলো-
সচিবালয় ক্লিনিক, ফুলবাড়িয়ায় সরকারি কর্মজীবী হাসপাতাল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, মাতুয়াইল শিশু মাতৃসদন হাসপাতাল, রাজারবাগে পুলিশ হাসপাতাল, আজিমপুর মা ও শিশু হাসপাতাল, কামরাঙ্গীরচরে ৩১ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতাল, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, নয়াবাজারে ঢাকা মহানগর জেনারেল হাসপাতাল, শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট, পিলখানার বিজিবি হাসপাতাল, লালবাগে ঢাকা মহানগর শিশু হাসপাতাল।
এ ছাড়া বংশালের কসাইটুলী নগর মাতৃসদন, হাজারীবাগে ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশন নগর মাতৃসদন, ধলপুরে নগর মাতৃসদন, উত্তর মুগদা মাতৃসদন ও খিলগাঁওয়ের তিলপাপাড়া মাতৃসদন কেন্দ্রে করোনার টিকা বা ভ্যাকসিন দেওয়া হবে।