সংঘর্ষ ও বর্জনের মধ্য দিয়ে ভোট গ্রহণ শেষ
নিজস্ব প্রতিবেদক : সংঘর্ষ, মারামারি ও ভোট বর্জনের মধ্য দিয়ে। অবশ্য অনেক পৌরসভায় সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে শেষ হয়েছে ভোট গ্রহণ।তৃতীয় ধাপে ৬৪টি পৌরসভা নির্বাচনের ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়েছে।সকাল আটটা থেকে ভোট গ্রহণ শুরু হয়ে চলে বিকেল চারটা পর্যন্ত। ভোট গ্রহণ শেষে এখন চলছে ভোট গণনা।
কিশোরগঞ্জঃ- কটিয়াদীতে আওয়ামী লীগের একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ ও প্রভাবের অভিযোগ তুলে ভোট বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন বিএনপির মেয়র প্রার্থীর তোফাজ্জল হোসেন খান।নৌকার সমর্থকেরা সকাল থেকে সব কটি কেন্দ্রে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছেন।ভোটারদের ধানের শীষে ভোট দিতে বাধা দেওয়া হয়েছে। তাই তিনি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ালেন।
এদিকে কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী পৌরসভা নির্বাচনে একটি কেন্দ্রে দুই কাউন্সিলর প্রার্থী সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে।বেলা ১১টার দিকে পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের তড়িয়াকোনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে এ ঘটনা ঘটে। এতে উভয় পক্ষের অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন। সংঘর্ষের বিষয়টি স্বীকার করে নির্বাচনে দায়িত্বরত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রফিকুল ইসলাম বলেন, এ ঘটনায় কিছুক্ষণ ভোট বন্ধ থাকার পর আবার ভোট গ্রহণ শুরু হয়।
সাতক্ষীরাঃ- সাতক্ষীরার কলারোয়া পৌরসভা নির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগে বিএনপির মেয়র প্রার্থী শেখ শরিফুজ্জামান ও স্বতন্ত্র প্রার্থী নার্গিস সুলতানা পৃথক সংবাদ সম্মেলন করে ভোট বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে তাঁরা সংবাদ সম্মেলন করে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেন।
বিএনপির মেয়র প্রার্থী শেখ শরিফুজ্জামান বলেন, তিনি ৩, ৮ ও ৯ নম্বর ভোটকেন্দ্রে গিয়ে দেখেন, তাঁর এজেন্টদের বের করে দেওয়া হয়েছে।উপস্থিত পুলিশ কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ করে কোনো ফল হয়নি।তাঁর সমর্থক ভোটারদের ভোট দিতে দেওয়া হচ্ছে না। কয়েকটি কেন্দ্রে মেয়র পদের ব্যালট দেওয়া হয়নি ভোটারদের। প্রশাসনের সহযোগিতায় আওয়ামী লীগের কর্মীরা ভোট–সন্ত্রাস করায় তিনি ভোট বর্জন করেছেন।
চুয়াডাঙ্গাঃ- কোনো কোনো কেন্দ্রে এজেন্টদের ঢুকতেও না দেওয়া সহ,এজেন্টদের বিভিন্ন কেন্দ্র থেকে বের করে দেওয়ার আভিযোগে নির্বাচন বর্জনের এ ঘোষণা দেন। চুয়াডাঙ্গার দর্শনা পৌরসভার বিএনপি-মনোনীত মেয়র প্রার্থী পৌর বিএনপির সাবেক জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি হাবিবুর রহমান নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন। সাড়ে ১১টার দিকে তাঁর প্রধান নির্বাচনী কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ ঘোষণা দেন।
বগুড়াঃ- বগুড়ার ধুনট পৌরসভা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এ জি এম বাদশাহর এজেন্ট সেলিম হোসেনকে আজ মারধরের অভিযোগ উঠেছে।নির্বাচন কেন্দ্রে দায়িত্বপ্রাপ্ত ধুনট থানার উপপরিদর্শক (এসআই) রিপন মিয়া জানান, মতিউর জোর করে কেন্দ্রে ঢুকে বিদ্রোহী প্রার্থীর পক্ষে এজেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করার অভিযোগে সেলিমকে মারধর করেন। ঘটনার পর থেকে মতিউর পলাতক।
লক্ষীপুরঃ- লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের পশ্চিম কাজিরখীল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রের সামনের সড়কে গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। এতে গুলিবিদ্ধসহ অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন। এর মধ্যে দুজন পুলিশ সদস্য রয়েছেন । দুপুর ১২টার দিকে কাউন্সিলর প্রার্থী আনোয়ার হোসেন জিতু (উটপাখি প্রতীক) ও মামুনুর রশিদের (পাঞ্জাবি) সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের এই ঘটনা ঘটে।
আহত দুই পুলিশ সদস্য কেন্দ্রের পাশের আনসার ক্যাম্পে প্রাথমিক চিকিৎসা নেন।পশ্চিম কাজিরখীল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ব্যালট পেপারে সিল মারাকে কেন্দ্র করে ওই দুই কাউন্সিলর প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে তর্কবিতর্ক হয়। একপর্যায়ে তাঁরা কেন্দ্রের বাইরে গিয়ে সড়কে অবস্থান নেন। এ সময় দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ লাগে।
খবর পেয়ে চট্টগ্রাম বিভাগের ডিআইজি আনোয়ার হোসেন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
সেখানে আগে থেকেই উপস্থিত ছিলেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আখতার জাহান সাথী। অতিরিক্ত জেলা পুলিশ সুপার (প্রশাসন) রিয়াজুল কবির বলেন, পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেছে। এ সময় ৯০টি গুলি ছোড়া হয়েছে। পরিস্থিতি এখন পুলিশের নিয়ন্ত্রণে।
রামগঞ্জ পৌরসভার ভোট গ্রহণ চলাকালে নৌকার এজেন্টদের বিরুদ্ধে ভোটের গোপন কক্ষে দাঁড়িয়ে থাকার অভিযোগ করেছেন বিএনপির প্রার্থী তোফাজ্জল হোসেন। তিনি বলেন,তাঁরা ভোটারদের কাছ থেকে মেয়র প্রার্থীর ব্যালট নিয়ে নৌকায় সিল মারছেন। কেন্দ্র থেকে তাঁর এজেন্ট বের করে দেওয়া হয়েছে। এখন বাধা দেওয়ার আর কোনো লোক নেই। তাঁরা ইচ্ছেমতো নৌকার ব্যালটে সিল মারছেন।
সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তা তোফাজ্জল হোসেন জানান, এখন পর্যন্ত কেউ তাঁর ভোট অন্য লোকে দিয়ে দিয়েছেন—এ ধরনের কোনো অভিযোগ করেননি।
ময়মনসিংহঃ- ময়মনসিংহের গৌরীপুর পৌরসভা নির্বাচনে ভোট জালিয়াতির অভিযোগে গৌরীপুর সরকারি কলেজে ভোটকেন্দ্র থেকে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর চারজন সমর্থককে আটক করা হয়েছে। আজ বেলা দেড়টার দিকে তাঁদের আটক করা হয়। তবে প্রাথমিকভাবে তাঁদের নাম জানা যায়নি।
গৌরীপুর পৌরসভা নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা আবদুর রহিম বলেন, আটক চারজনকে থানায় রাখা হয়েছে। ভোট গ্রহণ শেষে তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তাঁদের পরিচয়ের বিষয়টি নিয়ে তিনি কোনো বক্তব্য করেননি।
ফেনীঃ- ফেনী পৌরসভা নির্বাচনের ভোট চলার সময় দুই কাউন্সিলর প্রার্থীকে মারধর ও বিভিন্ন কেন্দ্র থেকে এজেন্টদের বের করে দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। সেই সঙ্গে কেন্দ্রের পাশে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। আজ সকালে ফেনী পৌরসভার ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের রামপুর মেহেদী-সাঈদী পৌর বিদ্যালয় কেন্দ্রে এ ঘটনা ঘটে।
মারধরের শিকার দুই প্রার্থী হলেন বিএনপি-সমর্থিত নুর ইসলাম (গাজর প্রতীক) ও তাজুল ইসলাম পাভেল (ডালিম প্রতীক)। তাঁরা অভিযোগ করে বলেন, আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের নেতা-কর্মীরা তাঁদের দুজনকে মারধর করেছেন।
নাটোরঃ- প্রশাসনের সহযোগিতায় ভোট ডাকাতির অভিযোগ তুলে বিএনপির মেয়র প্রার্থী মো. তায়জুল ইসলাম নাটোরের সিংড়া পৌর নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন। আজ বেলা একটায় সিংড়া পৌর বিএনপির কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে তিনি ভোট বর্জনের ঘোষণা দেন।
বর্জনের বিষয়ে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মো. জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, ভোট গ্রহণ নিয়ে কোনো অনিয়মের খবর তাঁর জানা নাই।তাঁর কোনো কর্মী ভোট ডাকাতি তো দূরের কথা, সামান্য অনিয়মও করেননি। বিএনপি অনেক আগেই ভোটের মাঠ থেকে সরে দাঁড়িয়েছে। এখন শুধু প্রশাসনকে বিব্রত করার জন্য বর্জনের ঘোষণা দিয়েছে।